You are currently viewing কেস স্টাডিঃ শাফা একটি বিস্ময়কর বেদানা জুস,
পামির কোলা ব্র্যান্ড

কেস স্টাডিঃ শাফা একটি বিস্ময়কর বেদানা জুস,

পামির কোলা ব্র্যান্ড যা যুদ্ধ পরবর্তী আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী ভূমিকা। 

পামির কোলা ব্র্যান্ডের “শাফা” শুধুমাত্র যুদ্ধ- বিদ্ধস্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে সুবাতাস দিচ্ছে না, এটি আফগানি অর্থনীতির উন্নতির পতাকা উড়াতে শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে শাফা আফগানিস্তানের অর্থনীতির ধারক এবং বাহক হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিক বাজারে ইসারায়েলি কোম্পানি “কোকাকোলা” এর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং অতি অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। 

পটভূমি

আফগানিস্তানের বেদানা শিল্পের নতুন সম্ভাবনার অন্য এক দিগন্তের নাম পামির কোলা। শাফা এই পামির কোলা ব্র্যান্ডেরই হাই- কোয়ালিটি সম্পন্ন, সম্পূর্নরূপে আফগানিস্তানের স্হানীয়ভাবে তৈরিকৃত একটি মূলধারার কার্বোনেটেড পানীয়। আফগানি অর্থনীতিতে এই পানীয়ের প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর সফলতা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করাই এই কেস স্টাডিস মূল লক্ষ্য। 

পামির কোলা ব্র্যান্ড হওয়ার কি-ফ্যাক্টরঃ 

১. সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব সোর্স এর উপর নির্ভরশীল হওয়া এবং উৎপাদন করাঃ 

শাফা এর উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে স্হানীয় কৃষকদের দ্বারা উত্পাদিত বেদানা এর উপর নির্ভরশীল। যা যুদ্ধে জর্জরিত স্হানীয় কৃষকদের অর্থনীতির চাকাকে আবার সচল করেছে। অল্পদিনে এই পানীয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সেইসব ভোক্তাদের কাছে যারা স্হানীয় অর্থনীতি, লোকাল ব্র্যান্ড এবং অকৃত্রিম স্বাদের কদর করে।

২. কৌশলগত মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং নীতিঃ 

প্রাচীনকাল থেকেই আফগানিস্তানের আবহাওয়া বিশ্বের সেরা বেদানা উত্পাদনের উপযুক্ত। বিশেষ করে কান্দাহার প্রদেশের বেদানা সুখ্যাতি তো দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। পামির কোলা ব্র্যান্ড এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের শাফা বেভারেজকে প্রিমিয়াম বেভারাজ হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করছে। 

এছাড়াও তালেবান সরকার এই ব্র্যান্ডের মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতিকগত ঐতিহ্য অনন্যসাধারনভাবে উপস্থাপিত করছে পুরো বিশ্বের সামনে। তারা এই বার্তা পৃথিবীতে পৌছে দিতে চায় যে আফগানিস্তান শুধুমাত্র পপি চাষের জন্য উপযুক্ত না বরং আরো অনান্য ফলনের জন্যেও উপযুক্ত। 

৩.আন্তর্জাতিক বাজারে পামির কোলা ব্র্যান্ডের অনুপ্রবেশঃ 

 স্হানীয় বাজারে শাফা কোমল পানীয় এর তুমুল জনপ্রিয়তা পামির কোলা কোম্পানিকে সাহসী করে তোলে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের অনুপ্রবেশের ব্যাপারে। তারা আন্তর্জাতিক বাজারে ভোক্তাদেরকে  এই পানীয়ের স্বকীয়তা, অকৃত্রিম স্বাদ এবং স্বাস্হ্যকর গুনাগুন দ্বারা আকৃষ্ট করার মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করে। এই সকল গুনের কারণে  শাফা কোমল পানীয়, ট্র্যাডিশনাল সোডা থেকে সম্পূর্নরূপে ভিন্ন॥ যা অল্প সময়ে তাদের জনপ্রিয়তা অর্জনের চাবিকাঠি। 

৪. তালেবান সরকার নীতিঃ  

২০২১ সালে তালেবান সরকার আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতার আসীন হলে আমেরিকা তাদের উপর অর্থনীতি অবরোধ দেয়। তাদের কয়েক বিলিয়ন ডলার আমেরিকান ব্যাংকে আটকে যায়। এছাড়াও বিশ্বের তিনটি দেশ ছাড়া আর কোন দেশের সরকার তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। যার মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়, আফিম উত্পাদনের সাথে তালেবানের সম্পৃক্ততা। সুতরাং অর্থনীতিকে বাঁচাতে, সাধারন আফগানি জনগণদের দারিদ্রসীমা থেকে মুক্তি দেবার প্রয়াসে এবং বিশ্বের কাছে নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে তালেবান সরকার আফিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে এবং লাখ লাখ হেক্টর পপি ক্ষেত ধ্বংস করে। তারা জনসাধারণকে পপি চাষ বাদে অন্য ফসল উত্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে। যার মধ্যে অন্যতম গম এবং বেদানা। আর তারই উত্কৃষ্ট মানের প্রোডাক্ট হচ্ছে শাফা। 

৫. মান নিয়ন্ত্রণ এবং সার্টিফিকেটঃ

পামির কোলা সর্বাত্মকভাবে শাফা কোমল পানীয়ের গুনাগুন এবং মান নিশ্চিত করেছে। তারা এ ব্যাপারে কোন ছাড় দিতে পাজি নয়। কোয়ালিটি, স্বাদ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস এর স্বচ্ছতার ব্যাপারে তাদের এই দৃঢ় মনোভাব এই কোমল পানীয়কে আন্তর্জাতিক বাজারে সার্টিফিকেট অর্জন করতে সাহায্য করেছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি করে একে বিশ্বের কোমল পানীয়ের অন্যতম পথিকৃত ব্র্যান্ড কোকাকোলার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উপস্থাপিত  করেছে।

৬. বৈচত্রিতা এবং প্রোডাক্ট লাইনঃ 

 ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পামির কোলা স্হানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে শাফা কোমল পানীয়ের স্বাদে, প্যাকেজিং এবং পরিবেশন নানারকম বৈচিত্রতা নিয়ে এসেছে। যা কোমল পানীয়ের আবেদনময়তা বৃদ্ধি করেছে সেই সাথে কোম্পানির মার্কেট ভ্যালু , শেয়ার এবং দেশটির অর্থনীতির উন্নতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

৭. ইজরায়েল আগ্রাসনঃ 

বর্তমান বিশ্ব বিশেষ করে সাধারন মুসলিম এবং অনান্য ধর্মালম্বীরা ফিলিস্তিনে  ইজারেয়লের অন্যায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে। যেসব ব্র্যান্ড ইজরায়েলের এই অন্যায় আগ্রাসন সমর্থন করছে, অর্থায়ন করছে অথবা স্বয়ং ইজারেয়ল দ্বারা পরিচালিত বিশ্বজুড়ে সাধারণ জনগনের মধ্যে তা বয়কট করার ঝড় উঠেছে। এজন্য অনেক মুসলিম বা অন্যান্য এসব ব্র্যান্ডের বদলে  এমন কোন ব্র্যান্ডকে খুঁজছে যা কোয়ালিটি সম্পন্ন, পুষ্টিকর গুনাগুনে ভরপুর, এবং সর্বোপরি যা তাদের আদর্শগত নীতির সাথে খাপ খায়। এমন প্রতিকূল পরিস্হিতিতে পামির কোলা ব্র্যান্ডের শাফা কোমল পানীয় এক অনন্য প্রতিস্হাপন। 

চ্যালেন্জ এবং ভবিষ্যৎ ভাবনাঃ 

যদিও অল্প কিছুদিনের মধ্যে শাফা অভূতপূর্ব সাফাল্য অর্জন করেছে তারপরও ব্র্যান্ডটিকে আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। একে সামনে বিভিন্ন প্রতিকূলতা জয় করতে হবে যেমন, সাপ্লাই চেন, আন্তর্জাতিক বাজারের রেগুলেশন, অর্থনীতি অবরোধ , রাজনৈতিক অস্হিরতা, যুদ্ধের হুমকি, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ক্রমাগত পরিবর্তন এবং সেই অনুযায়ী সাপ্লাই ইত্যাদি। তবে যাইহোক, কোম্পানি আশাবাদী যে তারা এতসব প্রতিকূলত জয় করবে এবং মার্কেটে তাদের অবস্হান আরো মজবুত করবে। 

উপসংহার

যুদ্ধ- বিদ্ধস্ত আফগানি জনগনের কাছে পামির কোলার শাফা কোমল পানীয় এক আশ্চর্যজনক জাদুর কাঠি ছোয়ানো গল্পের মতো। যার হাত ধরে তারা সমৃদ্ধ আফগানিস্তানের স্বপ্ন দেখছে যা তাদের কাছে বহুদিন থেকে আরাধ্য। এই কোমল পানীয় কেবলমাত্র যুদ্ধ বিদ্ধস্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে নতুনভাবে গঠনই করে নি। এটি তার থেকেও আরো বড় বিপ্লব ঘটিয়েছে। এটি তালিবান সরকারের বিশ্বের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার এবং পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের সহোদর ইজরায়েল এর ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতিবাদের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই কেস স্টাডি এর মাধ্যমে এইসকল বিষয়ের প্রতি আরো গভীরভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।      

Leave a Reply